আজ শনিবার, ২০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ইনজেকশন পুশ করেই মজা পান মান্নান

খানপুর হাসপাতালে জরুরী বিভাগে অবৈতনিক ডাক্তারের ভিন্নরকম বাণিজ্য !

# অতিমাত্রায় ইনজেকশন পুশ ক্ষতিকর : ডা. অলোক
# ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা : তত্ববধায়ক ডা. আবু জাহের

মো. মোমিনুল ইসলাম/ মনি ইসলাম:
পেটের ব্যথায়ও ইনজেকশন, জ্বরেও তাই। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে রোগির শরীরে ইনজেকশন পুশ করে বেশ মজা পান ডা. মো. আব্দুল মান্নান। তার এই মজার গোপন রহস্য বের করতে দৈনিক সংবাদচর্চার একটি টিম রোগী সেজে
শহরের ৩শ’ শয্যা (খানপুর) হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যান। এ সময় ধরা পড়ে ওই চিকিৎসকের আরও অনৈতিক কান্ড। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪ বছরের বেশী সময় ধরে অবৈতনিক হিসেবে এখানে কাজ করছেন মান্নান। তবে হাসপাতালে চাকরীরত ডাক্তারদের চেয়ে তার আয় কোন অংশে কম নয়। এদিকে অন্য চিকিৎসকরা বলছেন, অতি মাত্রায় ইনজেকশন দেয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।

খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের বেশিরভাগই নিরীহ ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। অনেকে আবার লেখাপড়া তেমন জানেননা। তাদের এ সরলতার সুযোগ নিয়ে অবৈতনিক ইর্মাজেন্সী মেডিকেল অফিসার ডা, মান্নান এক অনৈতিক খেলায় মেতে উঠেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই চিকিৎসক বিনা বেতনে কাজ করলেও নানা উপায়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। তিনি যে কোন রোগের জন্য অতি মাত্রায় ইনজেকশন লিখে দিচ্ছেন এবং সেই ইনজেকশনটি নির্দিষ্ট একটি কোম্পানীর। গত ১ মে দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকার ২ জন প্রতিনিধি রোগী সেজে ১০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে ডা. আব্দুল মান্নানকে দেখান। রোগির কথা কোনমতে শুনেই একজনকে পেটে ব্যাথার জন্য তিনি একাধিক ইনজেকশন লিখে দিলেন। অপরজনের শরীর জ্বালাপড়া ও মাথা ঝিমঝিম করার জন্যও তিনি একই পদ্ধতিতে ইনজেকশন লিখে দিয়েছেন। লিখে দেওয়া প্রেশক্রিপশন নিয়ে জরুরী বিভাগ থেকে বের হতে না হতেই একদল যুবক হামলে পড়ে রোগিদের উপর। এটা আমার, ওইটা তোর বলে একেকজন রোগীকে একেক দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেই সাথে দৈনিক সংবাদচর্চার ২ জন প্রতিনিধিকেও দুই জন ব্যক্তি দুইটি ফার্মেসীতে নিয়ে যায়। জরুরী বিভাগের বাইরে কিছু সময় অবস্থান করে দেখা যায়, ডা. মান্নানকে দেখাতে আসা অসংখ্য রোগীকে ঠিক একই কায়দায় ভিন্ন ভিন্ন রোগের কারনে শুধু মাত্র ইনজেকশন ও একটি করে শিরাপ লিখে দেয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করাতে বলা হয়। এরজন্য নির্দিষ্ট ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন এবং ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের প্যাডে সিল মেরে রোগীর যে সকল পরীক্ষা হবে তা লিখে দিচ্ছেন তিনি।

পরবর্তীতে নিজেদের ও একাধিক রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে এ দুই প্রতিবেদক সহ ডা. আব্দুল মান্নানের কক্ষে প্রবেশ করে সেবা নিতে আসা সব রোগীকে কি কারণে একাধিক ইনজেকশন লিখে দেয়া হচ্ছে প্রশ্ন করলে তিনি প্রথমে উত্তেজিত হন। পরে পরিচয় পেয়ে বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। এমনটা আর হবে না। আমি ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি বলেন, রোগীদের যে সকল ইনজেকশন আর ঔষধ দেয়া হয় তা খুবই কম মূল্যের। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে ডা. আব্দুল মান্নানের দেয়া ইনজেকশনগুলোর মূল্য সাধারণ রোগীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। একাধিক ইনজেকশনের মধ্যে একেকটির দাম ৭০০, ১০০০ কিংবা ১৫০০ টাকা। এই বিষয়টি ডা. আব্দুল মান্নানকে জানালে তিনি বলেন, আপনারা আমার বিরুদ্ধে কিছু বইলেননা, আপনাদের সাথে শনিবার দেখা হবে।

সূত্র মতে, ডা: আব্দুল মান্নান অবসর নিয়ে ৩০০ শয্যা হাসপাতালে বিনা বেতনে কাজ করছেন। ২০১৫ সালের ২ মে একটি অসাধু চক্র তাকে খন্ডকালীন সময়ের জন্য অবৈতনিক ইর্মাজেন্সী মেডিকেল অফিসার হিসেবে অত্র হাসপাতালে কাজ করার অনুমতি চেয়ে চিকিৎসা তত্ত্ববধায়ক বরাবর একটি আবেদন জমা দেয়া দেন। ওই আবেদন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা সবাই আব্দুল মান্নানের নিজস্ব লোক এবং খানপুর হাসপাতাল এলাকার একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র হিসেবে পরিচিত। অবৈতনিক এই চিকিৎসক নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানীর ঔষধ, ইনজেকশন এবং নির্ধারিত কিছু ডায়াগোনেষ্টিক সেন্টারে রোগি পাঠান। বিনিময়ে তিনি মাসিক মোটা অংকের টাকা পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রোগির শরীরে বেশি বেশি ইনজেকশন পুশ করার বিষয়ে খানপুর হাসপাতালের ডা. অলোক কুমার সাহা বলেন, প্রথমে মেডিসিন দিয়ে চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে ইনজেকশন দেয়া যাবে তবে অতি মাত্রায় ইনজেকশন পুশ মানবদেহের জন্র ক্ষতিকর।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসা তত্তাবধায়ক ডা, আবু জাহের এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি, তেমন ভাবে কারো সম্পর্কে জানা হয় নি। রোগীকে বিভিন্ন রোগে ইনজেকশন দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ঠিক না। একজন অবৈতনিক জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসারের কাছ থেকে সেবা পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কোন লাভে তিনি বিনা বেতনে কাজ করছেন সেট আমার জানা নেই তবে যারা বিনা সম্মানীতে কাজ করেন তাঁদের কাছ থেকে যথার্ত স্বচ্ছতা আদায় করা যায় না। অভিযোগের বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দেন।